পোস্ট টপিকঃ
কেমন করে আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম তার যেমন রয়েছে এক দীর্ঘ বিবর্তনীয় ইতিহাস, তেমনি সেই মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে কিভাবে কখন বন্য(Savagery) ও বর্বর(Barbarism) দশা অতিক্রম করে সভ্যতা গড়ে তুললো, সেই সভ্যতায় সংস্কৃতির বিকাশ ও বিবর্তন কিভাবে হলো এসবেরও রয়েছে জানা ও অজানা ইতিবৃত্ত। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণা এবং বিজ্ঞানের নতুন শাখা এই গবেষণায় যুক্ত হওয়ার কারণে সমাজ- সভ্যতা-সংস্কৃতির ইতিহাস বিষয়ে আমাদের জ্ঞান পরিচ্ছন্ন হচ্ছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে, এমনকি পরিবর্তিত হচ্ছে। এককালে যে জ্ঞান চর্চা শুধু পুরাতাত্ত্বিকদের হাতে সীমাবদ্ধ ছিলো ক্রমান্বয়ে তা নৃতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, ভূতত্ত্ব হয়ে আজ জিনতত্ত্ববিদদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ভারতীয় জিন নিয়ে গবেষণা
প্রাচ্য জগতের অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ এক সভ্যতা- সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা বিষয়ে, এই সভ্যতার মানুষদের এবং সেই সভ্যতার উত্তরাধিকারী তথা আজকের দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের ইতিহাস বিশেষত তাদের জেনেটিক ওরিজিন জানতে এমনই দুটো গবেষণা হয়েছিল। প্রথমটা The formation of human populations in South and Central Asia. এটা বের হয়েছে Science জার্নালে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। এই গবেষণাপত্রের লেখক ১১৭ জন, যদিও পিয়ার রিভিউ হওয়ার আগে এটা যখন একবার প্রকাশ হয় তাতে সদস্য ছিল ৯২ জন ।
দ্বিতীয়টা An Ancient Harappan Genome Lacks Ancestry from Steppe Pastoralists or Iranian Farmers. প্রকাশিত হয়েছে Cell জার্নালে ওই একই বছরে। এর লেখক ২৮ জন। দুটোতেই জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান শাখার গবেষক যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে দুটো গবেষণাপত্রের সাথেই যুক্ত আছেন এমন লেখক অন্তত পাঁচ জন। বিশেষত হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের দুজন জেনেটিসিস্ট- একজন আমেরিকান, অন্যজন ভারতীয়- এবং ভারতের একজন পুরাতত্ত্ববিদ দুটো গবেষণার সাথেই জড়িত।
দুটো পেপারের ভাষ্য একত্র করে আমরা একটা সংক্ষিপ্তসার তৈরী করতে পারি। অবশ্য দ্বিতীয় গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক বসন্ত্ সিন্ধে ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন। এই গবেষক আবার প্রথম গবেষণা পত্রেরও সহ-লেখক। গবেষণার মূল বিষয় উল্লেখ করার আগে একটু প্রেক্ষাপট আলোচনা করা যাক।
আফ্রিকা থেকে বহির্গমন
আমরা জানি যে আফ্রিকা থেকে যে আধুনিক মানুষ আফ্রিকার বাইরে পা বাড়িয়েছিল(Out of Africa Theory), আজ থেকে পয়ষট্টি হাজার বছর আগে সেই আধুনিক মানুষের বংশধররা দক্ষিণ এশিয়ায় পদার্পণ করে। এখানেই তারা প্রস্তর যুগ এবং বন্য ও বর্বর জীবন অতিবাহিত করে। তারপর নব্য প্রস্তর যুগ পার হওয়ার পর তাম্র যুগে এসে ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠতে থাকে পল্লীপ্রধান কৃষিভিত্তিক এক সভ্যতা। কৃষির বিস্তার ও উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে নগর। ফলে এক সমৃদ্ধ নগর সভ্যতার অভ্যুদয় হয় ভারতবর্ষে – সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা যার নাম। তামার ব্যবহার এই সভ্যতাকে দেয় গতি ও প্রবৃদ্ধি। বাংলায় সিন্ধু সভ্যতার একটি নিদর্শন হচ্ছে বর্ধমান জেলায় অজয় নদের তীরবর্তী পান্ডু রাজার ঢিবি।
এই সিন্ধু সভ্যতা ঠিক কতোটা প্রাচীন বা কখন গড়ে ওঠে তা নিয়ে বেশ মতভেদ আছে। সবচেয়ে প্রাচীন যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দ। আর সবচেয়ে নিকটবর্তী সময়টা বলা হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ।
এই প্রেক্ষাপট থেকেই শুরু হচ্ছে নতুন দুটো গবেষণা। গবেষণা পত্রদ্বয়ের বক্তব্য একসাথে করলে এভাবে বলা যায়: প্রাগৈতিহাসিক কালে ভারতবর্ষের বাইরে থেকে কয়েকবার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের ভারতে আগমন ঘটেছে এবং ভারতে বসবাসরত মানুষদের সাথে নতুন আগত জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ ঘটেছে। এরকম অন্তত তিনটি ধাপে এই আগমন ও মিশ্রণের ঘটনা ঘটেছে যার বর্ণনা দেওয়া যায় এভাবে :
দক্ষিণ ভারতের আদিপিতা
পয়ষট্টি হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আধুনিক মানুষের বংশধররা দক্ষিণ এশিয়ায় তথা ভারতে এসে বসতি স্থাপন করে। এদের নাম দেওয়া হয়েছে Ancient Ancestral South Indian বা Early Hunter-gatherers of Southeast Asia বা Andamanese hunter-gatherer related population. আন্দামানিজ হান্টার গেদারার রিলেটেড বলা হচ্ছে এই অর্থে যে আজকের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যে মানুষগুলোকে পাওয়া যায় তাদের সাথে আফ্রিকা থেকে ভারতে আসা সেই আধুনিক মানুষদের খানিকটা মিল আছে। আফ্রিকা থেকে আসা মানুষগুলো ঠিক কেমন ছিলো তা নির্দেশ করার মতো কোন নিদর্শন বর্তমানে নেই। মোটামুটি একটা ধারণা দেওয়ার জন্য আন্দামানের অধিবাসীদের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
বর্তমান ভারতীয় জিনের প্রধান উৎস
এরপর ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আসে দ্বিতীয় ম্রাইগ্রেন্টের ঢেউ। ইরানের জাগ্রোজ মাউন্টেন অঞ্চল থেকে ভারতবর্ষে আসে এই ইরানিয়ান হান্টার গেদারার জনগোষ্ঠী। নবাগত এই ইরানিয়ান হান্টার গেদারারের সাথে ভারতবর্ষে অবস্থানরত Early Hunter-gatherers of Southeast Asia এর সংমিশ্রণ ঘটে। এই মিশ্রণ চলতে থাকে পরবর্তী কয়েক হাজার ব্ছর। এই মিশ্র জনগোষ্ঠীই আরো পরে সম্ভবত ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে তোলে সিন্ধু সভ্যতা। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, মেহেরগড়, রাখিগড়ি এই সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতার কয়েকটি নগরকেন্দ্র। সিন্ধু উপত্যকার এই মিশ্র জনগোষ্ঠীই হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান জনগণের(Population) জিনের সর্বপ্রধান উৎস বা পূর্বপুরুষ; অর্থাৎ প্রধান সোর্স পপুলেশন।
সিন্ধু সভ্যতার নাগরিকদের জাতি পরিচয় কী তা পরিষ্কার জানা যায়না। নিশ্চিতভাবেই প্রাগার্য সভ্যতা। তবে আবার এটা পুরোপুরি দ্রাবিড় সভ্যতাও নয়, অস্ট্রিক সভ্যতাও নয়। প্রটো দ্রাবিড়ীয় হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের ভাষা থেকেই পরবর্তীকালে দ্রাবিড় ভাষা জন্মলাভ করেছে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর বর্তমান ভাষা দ্রাবিড় গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত।
সিন্ধু সভ্যতা অগ্রগতির চূড়া স্পর্শ করে খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের দিকে। আর তার পতনের শুরু ১৯০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ হতে। পতনের কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা খরা।
ভারতে আর্যদের আগমন
সিন্ধু সভ্যতা যখন পতনোন্মুখ, তখন খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে এই সভ্যতায় আসে সেই বহুল কথিত, বহুশ্রুত আর্য জনগোষ্ঠীর তরঙ্গ, সাথে নিয়ে আসে ইন্দো- ইউরোপীয় ভাষা। এদের আগমন ঘটে মধ্য এশিয়া তথা আজকের কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এসব অঞ্চল থেকে। এদের আরেক নাম হচ্ছে Central Asian Steppe Pastoralist. মধ্য এশিয়া থেকে এই প্যাস্টোরালিস্টদের দল ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বে ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ইউরোপেও। বয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাদের ভাষা। এরা যেখানে যেখানে ছড়িয়েছে সেখানকার ভাষাসমূহই হচ্ছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের সদস্য। আমাদের বাংলা ভাষা থেকে শুরু করে সংস্কৃত, হিন্দি,পালি, গ্রীক, রোমান, ফার্সি ইংরেজি সবই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের সদস্য।
Ancestral South Indian(ASI)
প্যাস্টোরালিস্টরা মূলত আধা যাযাবর পশুপালক সমাজের মানুষ। যে সিন্ধু সভ্যতায় এরা আসে, সেই সভ্যতার তুলনায় এরা অনেকটা অনুন্নত। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতার লোকেদের সাথে সংঘাত ও সমন্বয়ে এরাই একপ্রকার বিজয়ী হয়ে ওঠে। এরা সিন্ধু সভ্যতায় আগমনের ফলে সিন্ধু উপত্যকার অনেক লোক স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে আরো দক্ষিণে। সেখানে তাদের সাথে মিশ্রণ ঘটে ওখানে আগে থেকেই বসবাসরত Early Hunter-gatherers of Southeast Asia এর সাথে। এটা দ্বিতীয় মিশ্রণ। এই মিশ্রণে যে জনগোষ্ঠী তৈরী হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে Ancestral South Indian(ASI).
Ancestral North Indian(ANI)
আর সিন্ধু উপত্যকায় যে মানুষগুলো থেকে যায় তাদের সাথে নতুন আগত আর্যভাষী স্টেপি প্যাস্টোরালিস্টদের সংমিশ্রণ ঘটতে থাকে। এটা তৃতীয় মিশ্রণ। এর ফলে যে জনগোষ্ঠী তৈরী হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে Ancestral North Indian(ANI). প্রথম গবেষণাপত্রটি বলছে উচ্চ বর্ণের হিন্দু অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের মধ্যেই এই স্টেপিদের জিন বেশি পাওয়া যায়।
পরবর্তীকালে ২০০০ বছর ধরে এই ANI এবং ASI এর মিশ্রণ ঘটেছে। এই মিশ্রণ বন্ধ হয়ে যায় ১০০ খ্রিস্টাব্দে এসে। কারণ ততদিনে ভারতে চতুর্বর্ণ প্রথা স্থায়ী রূপ নেওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে উল্লেখযোগ্য যে, পূর্ব এশিয়া থেকেও অষ্ট্রো এশিয়াটিক ভাষাভাষী নরগোষ্ঠীও ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ভারতে এসে এখানকার নরগোষ্ঠীর সাথে মিশ্রিত হয়েছে। বাঙালিদের মধ্যে এই অষ্ট্রো এশিয়াটিকদের জিন পাওয়া যায়। তবে আজকের দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই ANI এবং ASI এর মিশ্রণ।
উল্লেখযোগ্য যে ভারতবর্ষে পরবর্তীতে শক, হূন, আফগান, পাঠান,পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজ প্রভৃতির আগমন ঘটলেও ভারতবর্ষের মানুষের জিনোমে তার কোন প্রভাব নেই।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশুদ্ধ জাতিগোষ্ঠী বলে কিছু নেই (সভ্য জগতের কোথাও কি আছে?)। না আছে রক্তের, না আছে জেনেটিক্সের না আছে সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা। যখন যে জাতি ভারতে এসেছে সাথে করে নিয়ে এসেছে তাদের সংস্কৃতি। তারপর ভারতের মাটিতেই ঘটেছে গ্রহণ বর্জন ও সমন্বয়ের পালা। আর্যদের বেলাতেও তাই। ঋকবেদের শুরুটা ভারতের বাইরেও হতে পারে। আর্যরা সেটা ভারতে এনেছে। ভারতের তথা সিন্ধু উপত্যকার সংস্কৃতির সাথে প্রথমে তাদের বিরোধ ঘটেছে। পরে সিন্ধুবাসী এবং আগত আর্যরা উভয়েই উভয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটেছে। ঋকবেদে একজায়গায় যেখানে ইন্দ্র লিঙ্গপূজারী সিন্ধুবাসীদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করেছে, অগ্নিকে আহবান করেছে দস্যু অর্থাৎ অনার্য সিন্ধুবাসীদেরকে ধ্বংস করার জন্য, পরবর্তীকালের যজুর্বেদ ও অথর্ববেদে সেই লিঙ্গ পবিত্র হয়ে গেছে, লিঙ্গপূজা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয় যে গবেষণা পত্রের কথা বলেছি সেখানকার লিড অথর বসন্ত্ সিন্ধে বলছেন যে তারা যে মহিলার জিনোম নিয়ে গবেষণা করেছেন, সেখানে সেন্ট্রাল এশিয়ার স্টেপি প্যাসটোরালিস্ট জিনের উপস্থিতির কোন প্রমাণ নেই। আসলে, ওই স্যাম্পলে সেটা থাকার কথাও নয়। কারণ ওই নারী কঙ্কালটি ২৬০০ খ্রিস্টপূর্বের। সংগ্রহ করা হয়েছিল ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সিন্ধু সভ্যতার একটি কেন্দ্র রাখিগড়ি থেকে। প্রথম গবেষণা পত্রটি কিন্তু বলছে যে ভারতে মধ্য এশিয়া থেকে প্যাসটোরালিস্টরা এসেছে ২০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়ের দিকে। সুতরাং এর পূর্বের কোন স্যাম্পলে প্যাসটোরালিস্ট জিনের উপস্থিত না থাকারই কথা। সুতরাং দ্বিতীয় গবেষণার এই ফাইন্ডিং কোনভাবেই প্রথম গবেষণার সংশ্লিষ্ট ফাইন্ডিংকে ভুল প্রমাণ করেনা।
বসন্ত্ সিন্ধে এও মনে করেন যে হরপ্পা সভ্যতার লোকেরা সংস্কৃত ভাষাতেই কথা বলতো এবং বৈদিক সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা একই মানুষদের সৃষ্টি। কিন্তু তার এই বক্তব্যের সাথে একমত নন অন্য অনেক গবেষক।
ব্লগের আরও কিছু লেখা-
ভারতই আর্যদের আদিভূমি?
সিন্ধু সভ্যতায় ভারতের বাইরে থেকে যারাই আসুক আর্যরা ভারতের বাইরে থেকে আসেনি। আর্যদের আগমন, যেটা Aryan Invasion বা Aryan Migration বলে পরিচিত, এরকম কিছু ঘটেনি। আর্যরা ভারতের ভূমিপুত্র। সিন্ধুর সংস্কৃতি এবং হিন্দুর সংস্কৃতি একমাত্র ভারতের অধিবাসীদের নিজস্ব অবদান। এখানে অন্য কারো অবদান নেই। বরং ভারত থেকে এখানকার অধিবাসীরা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে বিস্তার করে আর্য ভাষা(Out of India Theory)। এইটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদীদের দাবী। তাদের নেতা সাভারকরের মতে কাউকে ভারতীয় হতে হলে ভারতই হতে হবে তার পিতৃভূমি (Ancestral land) এবং পুণ্যভূমি (The land of his religion). তাই এরা জোর করেই আর্যদেরকে ভারতীয় এবং প্রটো দ্রাবিড়ীয় সিন্ধু সভ্যতাকে বৈদিক সভ্যতা বানাতে চায়। কিন্তু কোন গবেষণাতেই এই দাবীর পক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভারতের মানে আজকের দক্ষিণ এশিয়ার মাটিতে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে বহিরাগত! এখানে আদি অকৃত্রিম বিশুদ্ধ রক্ত ও সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। না থাকাতে দোষও কিছু নেই। এই বিশাল সভ্যতা সংস্কৃতি সমন্বয়ের ও বৈচিত্রের ক্ষেত্র। ভিন্নতা ও বৈচিত্রকে স্বীকার করে, সম্মান দেখিয়ে মিলিতভাবে থাকার প্রেরণা এই সভ্যতাক্ষেত্র।এই ভূমি আজন্ম কসমোপলিটান।
আর্যদের নিয়ে ThinkBangla‘র করা চমৎকার এই ভিডিয়োটি দেখতে পারেন –