April Fools’ Day বা এপ্রিল ফুলের ইতিহাস নিয়ে বেশ কতগুলো মতবাদ বা চিন্তা আছে। তবে মূলত দুটি মতবাদ সবচাইতে বেশী গ্রহণযোগ্য।
এপ্রিল ফুলের ইতিহাস
প্রাচীন রোমানরা মার্চের শেষদিকে “Hilaria” নামের একটা ভোজ-উৎসব পালন করতো। গ্রীক/রোমান মিথলজির দেবতা Attis এর পুনর্জন্ম উপলক্ষে এই আয়োজন। Attis শীতকালে মারা যায় এবং বসন্তে তার পুনর্জন্ম হয়। ফলে রুক্ষ, ফলহীন প্রকৃতি আবার ফলবান হয়ে ওঠে। এইদিনে সবাই ছদ্মবেশ ধরে থাকতো এবং হাসিতামাশা করে একে অন্যকে বোকা বানাতো। ধারণা করা হয় এই উৎসব থেকেই “এপ্রিল ফুল”-এর উৎপত্তি। লক্ষনীয় এই উৎসবের সাথে কৃষি এবং প্রকৃতির সাথে একটা সম্পর্ক আছে।
প্রাচীন পারস্যেও ওই সময়ে অর্থাৎ মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত সময়ে ঋতু পরিবর্তনের জন্য একটি কৃষি উৎসব পালন করা হতো। উৎসবের নাম – Sizdahbedar. আজও ইরানে এপ্রিলের শুরুতে এই উৎসব পালন করা হয়। হাসি-ঠাট্টা, একে অন্যকে নিয়ে কৌতুক করা হয়। ভারতের “হলি উৎসব” এটিরও একই মাহাত্ম্য। মূলত ঋতু পরিবর্তন ও কৃষি উপলক্ষে মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরুর সময়টাতে বিভিন্ন স্থানে এইধরণের উৎসব পালিত হত এবং এখনো হয়।
জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ও আর্তব উৎসব
মধ্যযুগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১লা এপ্রিল থেকে বছরের হিসাব করা হত। এই ক্যালেন্ডারের হিসাবে ত্রুটি থাকায় ১৫৮২ সালে ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরী নতুন একটি ক্যালেন্ডারের প্রচলন করেন। গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১লা এপ্রিলের পরিবর্তে ১লা জানুয়ারি হতে বছর গোণা শুরু হয়।
কিন্তু নতুন এ রীতি তৎক্ষণাৎ ইউরোপের সবখানে প্রচার পায় নি। অনেকেই পুরোন রীতি অনুযায়ী ১লা এপ্রিলেই নববর্ষ পালন করতে লাগলো। সেইসময় নতুন রীতি মেনে চলা ব্যক্তিরা পুরোন রীতি অনুসারীদের নিয়ে হাসি তামাশা করা শুরু করলো। মূলত এখান থেকে এপ্রিল ফুলের সূচনা। ১৭০০ সাল থেকে ইংরেজরা এইদিনটিকে “এপ্রিল ফুল” দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
এবার আমাদের বাংলা সনের দিকে একটু নজর দেয়া যাক! বাংলা সনের প্রবর্তন সম্রাট আকবর করলেও এই উপমহাদেশে অনেক আগে থেকেই বার মাসের হিসাব শুরু হয়েছিল। প্রাচীন বঙ্গদেশের (গৌড়) রাজা শশাঙ্ক (রাজত্বকাল আনুমানিক ৫৯০-৬২৫ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। তৎকালীন সমাজের কৃষিকাজ ঋতু নির্ভর ছিল।
তারা বৈশাখে “আর্তব উৎসব” তথা ঋতুধর্মী উৎসব পালন করতো। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। উপরে আগেই বলেছিলাম প্রাচীন পারস্যে এই উৎসবের প্রচলন ছিল। সম্রাট আকবরের নির্দেশে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে তাল রেখে বাংলা সনের প্রবর্তন ঘটে। যে কারণে জুলিয়ান নিয়মের সাথে মিল রেখে এপ্রিল থেকে বাংলা বর্ষের শুরুর হিসেবও রয়ে গিয়েছে।
প্রচলিত মিথ্যা গুজব
এবার আসি এপ্রিল ফুলের ইতিহাস নিয়ে বহুদিন ধরে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর একটা বিষয়ে। মুসলিমদের মধ্যে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে যে, স্পেনে মুররা (মুর জাতি যারা মুসলিম ছিল) যখন খ্রিষ্টানদের কাছে পরাজিত হয় এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়, তখন খ্রিস্ট সেনারা তাদেরকে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্তর নিয়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। মুররা নিশ্চয়তা পায় যে তারা তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদে জাহাজে চেপে দেশ ছাড়তে পারবে। কিন্তু পহেলা এপ্রিলে তারা জাহাজে যাবার আগেই খ্রিস্ট সেনারা আগুনে পুড়িয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এরকমই কাহিনীটা।
সত্যি বিষয়টা হচ্ছে, উপরের এই ঘটনাটির কোনো ঐতিহাসিক দলিল নেই। সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটা কাহিনী। এই বিভ্রান্তি কে বা কারা ছড়িয়েছে সেটা জানার উপায় নাই। তবে বেশ কতগুলো ইসলামী সাইট ঘুরে এই বিষয়টিকে ভ্রান্ত বলেই দাবি করতে দেখেছি। এটি বিদ্বেষমূলক অপপ্রচারনা ছাড়া কিছুই নয়।
তথ্যসূত্রঃ
(১) April Fools’ tradition popularized
(৩) April Fools’ Day
(৪) পহেলা বৈশাখ
মুর’দের নিয়ে ভ্রান্তকাহিনী-
(৫) The Origin of “April Fool”?
(৬) Muslims fooled by April Fool’s Day Internet Urban Legend
(৭) Truth About April Fool’s Day And Muslim Representative Method of Scientific Inquiry