ক্রোনাস যখন আদি পিতা ইউরেনাসকে কেটে ফেলে, তখন কর্তিত একাংশ গিয়ে পড়ে সমূদ্রে। সেখানকার ঢেউয়ের ফেনা থেকে জন্ম নেয় আফ্রোদিতি । যার আরেক নাম ভেনাস। ইনি ছিলেন প্রেমের দেবী, প্রণয়ের দেবী, উর্বরতার দেবী। কামনা ও যৌণতার দেবী হিসেবে যার সুখ্যাতি রয়েছে! সৌন্দর্য ও সৌভাগ্যেরও প্রতীক তিনি।
আফ্রোদিতি সমূদ্রের ঢেউয়ের ফেনায় যখন ভাসছিল, জেফাইরাস তাকে তুলে নিয়ে প্রথমে সাইথেরিয়া পরে সিসিলিতে নিয়ে আসে। সে এত রূপসী ও আকর্ষণীয়া ছিল যে দেবতা বা মানুষ কারো পক্ষেই তাকে এড়ানো সম্ভব ছিল না।
দেবতাদের উদ্যোগে তার বিয়ে হয় খোঁড়া এবং কুৎসিত দেবকারিগর, আগুনের দেবতা হেফাস্টাসের সাথে। কিন্তু হেফাস্টাসের সাথে আফ্রোদিতি সুখী ছিল না। তাই যুদ্ধের দেবতা অ্যারেস বা মার্স এর সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সূর্যদেবতা হেলিওস এই ব্যাপারটা হেফাস্টাসের কানে পৌঁছে দেয়। হেফাস্টাস তখন এক সূক্ষ্ম জাল তৈরি করে বিছানায় ফাঁদ পেতে রাখে। প্রণয়মুহূর্তে অ্যারেসের সাথে সেই জালে ধরা পড়ে আফ্রোদিতি।
তাদের লীলাদৃশ্য দেখানোর জন্য হেফাস্টাস সব দেবতাদেরকে ডেকে আনে। অ্যাপোলো ও হার্মেস মুচকি হেসে নিজেদেরকে শুধালো, অ্যারেসের মত এমন অবস্থায় তারা ধরা পড়লে ধন্য হয়ে যেত! জিউস কোন কথা না বলেই সেখান থেকে চলে যায়। এদিকে দেবতা পসাইডন আফ্রোদিতির দিকে আকৃষ্ট হয়। সে হেফাস্টাসকে বলে অ্যারেসকে মুক্ত করে। এদিকে বিচার না পেয়ে বেচারা হেফাস্টাস বাধ্য হয়েই আফ্রোদিতির সাথে থাকে।
অ্যারেস তো আফ্রোদিতির প্রেমিক ছিলোই, আরও যারা ছিলো হার্মেস, পসাইডন ও দিওনুসুস। আফ্রোদিতি জিউসের সাথেও প্রণয়ের চেষ্টা করে, কিন্তু জিউস তাকে পাত্তা দেয় নি। তিনি ট্রয়ের রাজপুত্র আনকিসেসের প্রেমে পড়ে তার সাথে মিলিত হয়। তাদের এক পুত্র জন্মায়- আইয়োনাস। যে বীর হিসেবে খ্যাত হয় পরে।
আফ্রোদিতি তার সৌন্দর্য নিয়ে বেশ অহংকারী ছিল। একবার হলো কি, সাইপ্রাসের রাজকন্যা মিরা ছিল খুব সুন্দরী। এমনকি মিরাকে দেবী আফ্রোদিতির চাইতেও সুন্দরী ভাবা হতো। এই ব্যাপারটা দেবীর খুব অহমে লাগলো। দেবী মিরাকে ফুলের গন্ধে বশীভূত করে নিজের পিতা সিনারসের প্রতি আসক্ত করে তোলে। রাতে কামাসক্ত মিরা সাথে অনাচারের ভয়ে সিনারস তরবারি দিয়ে তাকে তাড়া করলো। মিরাকে এরপরেই দেবী আফ্রোদিতি গাছে পরিণত করে ফেলে। পরে অবশ্য আফ্রোদিতি অপরাধবোধের বশে সেই গাছ থেকে এক শিশুপুত্র অ্যাদোনিসকে জন্ম দেয়।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
আফ্রোদিতি সেই শিশুপুত্রটিকে তুলে দেয় পার্সিফোনের হাতে। পার্সিফোন সেই শিশুকে বড় করে তোলে এবং তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু আফ্রোদিতি অ্যাদোনিসকে নিজের বলে দাবি করে! পার্সিফোনও জিউস কন্যা, তাই দাবি ছাড়লো না। তাদের এই বিবাদ মিমাংসা করলো সঙ্গীত ও কবিতার দেবী ক্যালিওপি। ঠিক হয় অ্যাদোনিস চার মাস করে একেকজনের কাছে থাকবে আর বাকি চার সে তার নিজের মতো থাকবে। কিন্তু আফ্রোদিতি চারমাসে অ্যাদোনিসকে এতটাই মোহগ্রস্ত করে ফেলে যে, পার্সিফোনের কাছে থেকে অ্যাদোনিস চলে আসে।
পার্সিফোন বঞ্চিত হয়ে আফ্রোদিতির প্রাক্তন প্রেমিক যুদ্ধের দেবতা অ্যারেসের সাথে জোট বেঁধে অ্যাদোনিসকে হত্যা করে। অ্যাদোনিসের রক্ত থেকেই জন্ম হয় “গোলাপ” ফুলের। আর অ্যাদোনিসের শোকে আফ্রোদিতির চোখের পানি থেকে জন্মায় জেসমিন ফুল।
স্বর্গে একবার কে বেশি সুন্দরী, দেবী আর্তেমিস নাকি আফ্রোদিতি, সেটা নির্ধারণের জন্যে ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিসকে ডাকা হয়। আফ্রোদিতি সুন্দরী হেলেনকে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলে প্যারিস আফ্রোদিতিকেই সেরা সুন্দরী বলে ঘোষণা দেয়! ট্রয়ের যুদ্ধে আফ্রোদিতিই প্যারিসকে রক্ষা করেছিল। ট্রয়ের যুদ্ধের মূল হোতা হিসেবে আফ্রোদিতিকেই দায়ী করা হয় অবশ্য।