দিমিতি ও পার্সিফোনির কথা
ক্রোনাস ও রিয়ার কন্যা দিমিতি যার অন্য নাম হচ্ছে সিরিস। শস্য ও কৃষির দেবী। তার জন্যেই গাছে ফুল, ফল হয়। মানুষ এই দেবীর কারনেই বেঁচে থাকে।
দিমিতির ছিল একটিমাত্র কন্য পার্সিফোন। পার্সিফোনকে বলা হয় বসন্ত-কুমারী। একদিন পার্সিফোন- ওকিয়ানস ও টেথিসের কন্যাদের সঙ্গে ফুল তুলছিল। পাতালপুরী ও মৃতদের শাসক দেবতা হেডিস আবার পার্সিফোনিকে স্ত্রী হিসেবে কামনা করতো। হেডিস পার্সিফোনিকে ফুল তুলতে দেখে তার ভাই জিউসকে বললো সাহায্য করতে। জিউস তখন বাগানে পড়ে থাকা ফুলের মধ্যে অদ্ভুত সুন্দর দর্শী ‘নার্সিসাস‘ ফুল রাখলো, যেটা কেবল পার্সিফোনের চোখে পড়লো। পার্সিফোন এই স্বর্গীয় সুন্দর ফুল দেখে মোহিত হয়ে গেল এবং সেগুলো কুড়িয়ে তার ঝোলাতে রাখতে লাগলো।
এমন করে সে তার সঙ্গিদের থেকে যেই না দূরে সরে গেল, ওমনি মাটির নিচ থেকে কালো ঘোড়ার রথে চেপে হেডিস বেড়িয়ে আসলো এবং পার্সিফোনকে ধরে পাতালপুরীতে নিয়ে গেল। অপহৃতা পার্সিফোন চিৎকার করে জিউসের সাহায্য চাইলো কিন্তু জিউস তাতে কান দিল না। তবে সেই ডাক ঠিকই তার মা দিমিতির কানে পৌছে গেল। অপহরণের এই ঘটনাটা হেকাটি ও সূর্য দেব হেলিওস দেখে ফেলেছিল।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
দিমিতি এরপরে তো পাগলের মত তার প্রিয় সন্তানকে খুঁজতে লাগলো। নয় দিন ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও পার্সিফোনকে কোথাও পাওয়া গেল না। দশম দিনে দিমিতির সাথে হেকাটির দেখা হলো। হেকাটি তাকে হেলিওসের সাথে দেখা করতে বললো। দিমিতি হিলিওসের কাছে গেলে সূর্যদেব তাকে সব ঘটনা বললো: “পার্সিফোন আছে পাতালপুরীতে, ছায়াময় মৃতদের মাঝে।”
এই কথা শুনে দিমিতি শোকে, দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেল। এই ঘটনার জন্যে দিমিতি জিউসকে দায়ী করলো এবং তৎক্ষণাৎ অলিম্পাস থেকে পালিয়ে মর্ত্যে মানুষের ভীড়ে নেমে এলো এবং ক্রিতীয় বৃদ্ধার চেহারায় ছদ্মবেশ ধরলো।
তিনি ঘুরতে ঘুরতে এলেউসিসে এসে পৌছায়। সেখানে মেটানেইরা নামের একজন তাকে থাকতে বললো। জ্ঞানী সিলিয়াস ও মেটানেইরার এক শিশু পুত্র ছিল দিমোফুন নামের। দেবীকে দিমোফুনের পরিচর্যা করার জন্যে রাখা হয়। দিমোফুনকে পেয়ে দেবী মাতৃস্নেহে কোলে তুলে নিল। তাকে দেবতাদের খাবার অ্যামব্রোজিয়া খাওয়াতে লাগলো এবং আগুনের উত্তাপ দিতে লাগলো রোজ। যাতে করে শিশুটি অমরত্ব পায় এবং চিরতরুণ থাকে। কিন্তু এক রাতে মেটানেইরা দেখে যে ধাত্রী দিমোফুনকে আগুনের উপরে রেখেছে, আর অমনি চিৎকার করে উঠে। এতে দেবী ভীষণ রেগে গিয়ে তার আত্মপরিচয় দেয়। দিমিতি তাকে নির্দেশ দিল যে শহরে তার সন্মানে একটা মন্দির তৈরি করতে। সিলিয়াস দেবীর জন্যে সেখানে একটা মন্দির স্থাপন করে। এই মন্দিরই “এলেউসীয় মিস্ট্রি” বলে পরিচিত। সেখানেই দেবী তার কন্যার জন্য প্রতিক্ষা করতে লাগলো।
এদিকে দিমিতির প্রস্থানের পর মানুষের জীবনে দুর্যোগ নেমে এলো। কোন ফসল জন্মালো না, গাছগাছালি সব মরে গেল। দুনিয়া ধূসর মরুভূমিতে পরিণত হলো। অবস্থা চরম পর্যায়ে যাওয়ার পরে দেবতারা জিউসকে অনুরোধ করলো কিছু একটা করার জন্য। জিউস খানিক মাথা চুলকে হার্মিসকে পাঠালো পাতালপুরীতে পার্সিফোনকে ফিরিয়ে আনতে। দেবতাদের মধ্যে হার্মিসই পাতালপুরীতে যেতে পারতো। তো হার্মিস হেডিসের কাছে জিউসের ইচ্ছার কথা বললো। হেডিস জানতো যে জিউসের নির্দেশ সে অমান্য করতে পারবে না। তাই সে হার্মিসের কাছে অনুরোধ রাখে যেন সে জিউসকে তার ব্যাপারে একটু সদয় হয়। সেইসময় হেডিস পার্সিফোনকে ডালিমের বীজ খাইয়ে দেয়, যাতে তাদের বিবাহ বন্ধন চির অটুট থাকে।
তো হার্মিস পার্সিফোনকে নিয়ে পাতালপুরী থেকে সোজা দিমিতির কাছে চলে যায়। দিমিতি তার প্রিয় সন্তানকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরে। এবং সব কথা শুনতে থাকে পার্সিফোনের কাছে। দিমিতি যখন ডালিমের বীজের ব্যাপারে জানতে পারে, তখন খুব মন খারাপ করে। সেইসময় দিমিতির মা রিয়া এসে উপস্থিত হয় এবং বলে যে, “স্বর্গের দেবতারা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বছরের আটমাস পার্সিফোন তোমার কাছে থাকবে আর বাকি চার মাস থাকবে পাতালপুরীতে। তোমার আসল সন্মানের স্থান হচ্ছে অলিম্পাস। সেখানে ফিরে চলো আর মানুষের সব কষ্ট দূর করে দাও, যেটা একমাত্র তুমিই পারো।”
দিমিতি তখন অলিম্পাসে ফিরে গেল এবং মর্ত্য আবার ফুলে, ফলে, ফসলে, গাছ-গাছালিতে সজীব হয়ে গেল। দেবতাদের কথামত বছরের আটমাস পার্সিফোন থাকে দিমিতির কাছে। আর বাকি চার মাস থাকে পাতালপুরীতে। এই চারমাসই শীতকাল থাকে পৃথিবীতে।
দিমোফুন নামের সেই ছেলেটি পরে পরাক্রমশালী এক রাজা হয়। সে ট্রিপ্টলেমাস নামে খ্যাত।