এক
টাক্সপান থেকে গ্রামা ইয়াটে করে কিউবার দিকে রওনা হয়েছেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো। সাথে বিরাশি জন বিপ্লবী সেনা। সমুদ্র থেকে কিউবা আক্রমণের পরিকল্পনাটা কিউবার ভিতরের সাথে সমন্বিত করেই করা হয়েছিলো। পরিকল্পনা ছিলো যে, নভেম্বরের ৩০ তারিখে গ্রামা কিউবাতে অবতরণ করবে। সেইদিন কিউবার অভ্যন্তরে থাকা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রায়োর অনুসারীরা স্যান্টিয়াগো দে কিউবা এবং অন্যান্য অঞ্চলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিক্ষোভ শুরু করবে।
এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন ফ্রাঙ্ক পেইস। এই ফাঁকে ফিদেল ক্যাস্ট্রো তাঁর বাহিনী নিয়ে এসে আক্রমণ চালাবে। প্রায়োর অনুসারীরা তাদের কাজ ঠিকমতো করলেও ফিদেল ক্যাস্ট্রো তাঁর কাজ করতে ব্যর্থ হলেন। তিনি গ্রামা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে কিউবাতে অবতরণ করতে পারলেন না।
প্রচণ্ড রকমের খারাপ আবহাওয়ার কারণে গ্রামার অবতরণে দেরি হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে চে গুয়েভারা বলেছেন,
টুক্সপান বন্দর থেকে অন্ধকারে রওনা হলাম আমরা। লোক আর জিনিষপত্রের চাপে ছোট তরীটির প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা। তার উপর আবহাওয়া খারাপ, সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপসাগরের মধ্যে ঢুকে পড়ার পর নৌকার আলোগুলো প্রথম জ্বালাবার সাহস পেলাম আমরা। কিন্তু একটু পরেই শুরু হয়ে গেলো প্রচণ্ড সমুদ্রপীড়া, আমরা প্রাণপণে তার প্রতিকারের জন্য ট্যাবলেট খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু হাতের কাছে সেগুলি পাওয়া গেল না। পেটের যন্ত্রণা এবং মাথাঘোরার মধ্যেই আমরা গাল ধরলাম – কিউবার জাতীয় সংগীত আর ২৬শে জুলাই স্মরণ সংগীত।
পাঠক, খেয়াল করুন। আমি বার বার বলছি, কিউবার বিপ্লব কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছিলো না, ছিলো জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। চে গুয়েভারার এই বক্তব্য আমার সেই দাবিকেই সমর্থন করে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সৈনিকদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার কথা না। জাতীয় সংগীত গায় জাতীয়তাবাদীরা।
১লা ডিসেম্বর রাতে গ্রামা পৌঁছালো কিউবার উপকূলে। ফ্রাঙ্ক পেইসের লোকেরা আলোর সংকেত দেবার কথা। বহুক্ষণ অপেক্ষার পরে সেই আলোর সংকেত মিললো। তারপরেও গ্রামাতেই আটকে ছিলো বিপ্লবীরা অনেকক্ষণ। গ্রামার ভারি ওজনের কারণে তীরের খুব কাছে তাকে নেওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে প্রায় কোমর পানিতেই নেমে পড়তে হয়ে বিপ্লবীদের। কিন্তু, এর মধ্যেই বিপদ ঘটে যায়। গ্রামা নজরে পড়ে যায় কিউবান নেভির পেট্রোলবোটের। চে গুয়েভারার বর্ণনাতেই শুনি সেই কাহিনি,
কিন্তু তটভূমি পর্যবেক্ষণরত একটি জাহাজের নজরে পড়ে গেলার আমরা। ওরা একটুও দেরি না করে বাতিস্তা বাহিনীকে টেলিগ্রাম করে দিল আমাদের উপস্থিতি সম্পর্কে। হাতে আমাদের একটুও সময় ছিল না। কোনরকমে নৌকা থেকে নেমেই আমরা জলাভূমির মধ্যে আত্মগোপন করতে চাইলাম। আমাদের জিনিষপত্রের বেশির ভাগ নৌকাতেই থেকে গেল। জলাভূমির মধ্যে প্রবেশ করার একটুখানি পরেই বাতিস্তার বিমানবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ সুরু করে দিল। জলাভূমিতে লুকিয়ে থাকার সুবিধে ছিল, শত্রুরা আমাদের ঠিক নজর করতেও পারছিল না।
বিমানবাহিনী সুবিধা না করতে পারলেও প্রায় এক হাজার সৈন্য চলে আসে বিপ্লবীদের ধরার জন্য। ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে সৈন্যরা খুঁজে বের করে ফেলে বিপ্লবীদের। এই তিনদিন তাড়া খেতে খেতে বিপ্লবীরা প্রচণ্ড রকমের ক্লান্ত ছিলো। আখের খেতের পাশে অপেক্ষাকৃত ঘন জঙ্গলের মধ্যে বিশ্রাম নিচ্ছিলো সকলে। ঠিক এই সময় বাতিস্তা বাহিনী আক্রমণ চালায় ফিদেলের বিপ্লবীদের উপর। চে-র মুখেই শুনি সেই ঘটনা।
দুপুরের দিকে অবস্থা গেল বদলে। তাকিয়ে দেখি মাথার ওপর সামরিক এবং অসামরিক বিমানগুলি চক্কর দিচ্ছে। তার ওপর আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার উন্মুক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে আখ কাটছিলেন, ভাবতেও পারেননি যে বিমানগুলির দৃষ্টির আওতায় তাঁরা এসে গেছেন। দলের ডাক্তার হিসাবে আহত সৈনিকদের চিকিৎসা করছিলাম আমি। পরিষ্কার মনে আছে শেষ রোগীটি ছিলেন হামবার্তো লেমোট। কিন্তু, তখন কি জানতাম সেদিনটিই ছিল তাঁর জীবনের শেষদিন। তাঁর ক্লান্ত অবসন্ন চোখদুটি আজও আমার স্মৃতিকে ব্যাকুল করে তোলে, আমার ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে নিজের ঘাঁটিতে ফিরছিলেন, জুতোজোড়া হাতে নিয়ে, পরবার সাধ্য ছিল না তাঁর।
আমি কমরেড মন্টেনের সংগে পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম আর দু’জনে মিলে সামান্য খাদ্যটুকু খাচ্ছিলাম, এমন সময় আচমকা প্রথম গুলির শব্দ শুনলাম। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের বিরাশি জনের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে গুলিবৃষ্টি হতে লাগলো। আমার রাইফেলটা ছিল নিকৃষ্ট ধরণের, নিজে এ্যাজমায় ভুগে ভুগে হাড়গিলে হয়ে গেছি, একটি ভাল রাইফেল তাই ইচ্ছে করেই নিইনি। ক্যাপ্টেন আলমিডো আদেশের প্রত্যাশায় এগিয়ে এলেন, কিন্তু আদেশ দেবার মত কেউ ধারেকাছে ছিলেন না। ফিদেল তখন সমস্ত দলটিকে সংহত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন, সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে চাইছেন। একটু দূরে যেতে পারলে আশ্রয় জুটতো, কিন্তু সেখানে যেতে হলে খানিকটা খোলা মাঠ পেরিয়ে যেতে হবে। শত্রুর আক্রমণ শুধু প্রাচুর্যে নয়, ব্যাপকতায়ও ভারী।
আলমিডো নিজের দলের ভার নিতে সরে গেলেন। একজন সহযোগী আমার পায়ের কাছে একবাক্স কার্ত্তুজ ফেলে দিলেন। তুলতে যাচ্ছিলাম, তাঁর গলা শুনলাম – গুলি চালাবার আর সময় নেই। তিনি ছুটলেন আখের ক্ষেতের দিকে। আমার পায়ের কাছে তখনও পড়ে রয়েছে একবাক্স কার্ত্তুজ আর আমার ওষুধপত্রের ব্যাগ। কোনটা তুলে নেব তাই ভাবছিলাম। জীবনে বোধহয় সেই প্রথমবার। কার্ত্তুজের বাক্সটাই তুলে নিলাম আমি এবং খোলা জায়গাটা পেরিয়ে আখের ক্ষেতে ঢুকলাম। দেখলাম কমরেড ফস্টিনো পিরেজ শত্রুসৈন্যের দিকে পিস্তল তাক করে চলেছেন। ঠিক আমার পাশ দিয়ে চলছিলেন আরবেনটোসা নামে আর একজন বিপ্লবী। ঠিক সেই মুহূর্তে একঝাঁক গুল এসে আমাদের দু’জনকেই বিদ্ধ করলো। বুকে এবং গলায় প্রচণ্ড আঘাত পেলা, মনে হচ্ছিল যেন মরে যাচ্ছি।
বাতিস্তা বাহিনীর এই প্রবল আক্রমণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো-র সমুদ্রপীড়ায় আক্রান্ত অপেশাদার বিপ্লবীরা। ১২-২০ জনের মতো বেঁচে যায়, বাকিরা সবাই হয় মারা পড়ে নয়তো ধরা পড়ে সেনাবাহিনীর হাতে। ফিদেল, রাউল এবং আহত চে সহ বাকিরা নানাপথ পাড়ি দিয়ে শেষে ঠাঁই নিলো সিয়েরা মায়েস্তার মনগো পিরেজের বাড়িতে।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
গ্রামা ইয়াটে করে কিউবাতে এসে আক্রমণ করে বাতিস্তাকে হঠানোর পরিকল্পনা বিফলে গেলো। ফিদেল ক্যাস্ট্রো হারালো তাঁর প্রায় সব যোদ্ধাকেই। কিন্তু, সূর্যের রূপালি আলোকরশ্মি মেঘের আড়ালে লুকানো এখানেই। এই করুণ পরাজয়ের পরে সিয়েরা মাস্তেরা থেকেই একদিন শুরু হলো চলা তাঁর বিজয় রথের।
দুই
গ্রামা ইয়াটের যোদ্ধাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকই জীবিত ছিলো। এদের নিয়েই সিয়েরা মায়েস্ত্রাতে ম্যাগডালেনা এবং লা প্লাটা নদীর অববাহিকায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো। এখানে বিদ্রোহী বাহিনী তৈরি করার দিকে মন দেন তিনি। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাঁর বাহিনী আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
এদিকে গ্রামার আক্রমণ সাফল্যজনকভাবে প্রতিহত করে বাতিস্তার প্রোপাগান্ডা মেশিন দাবি করে বসে যে এই লড়াইয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রো নিহত হয়েছে। হাভানার ইউনাইটেড প্রেস ব্যুরোর চীফ ফ্রান্সিস এল ম্যাকার্থি দাবি করে যে, গ্রামা থেকে নামার পরপরই ফিদেল ক্যাস্ট্রো নিহত হয়েছে। তাঁর এই দাবি তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে প্রচার করলেন।
মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বাতিস্তা সরকারের জন্য এই দাবি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিলো। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধি হার্বার্ট ম্যাথিউজ সিয়েরা মায়েস্ত্রাতে গিয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাক্ষাৎকার নিলেন। তাঁর এবং তাঁর বাহিনীর ছবি তুলে নিয়ে গেলেন।
ছবি তুলে নিয়ে গেলেও ম্যাথিউজের প্রথম প্রবন্ধ ছাপা হলো ছবিবিহীনভাবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠায়। কিউবান সরকার সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া দেখালো। এই প্রবন্ধকে মিথ্যা বলে দাবি করলো তারা। কিউবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডঃ স্যান্টিয়াগো ভার্ডেয়া একে চমৎকার উপন্যাস হিসাবে ঘোষণা দিলেন। পরের দিনই নিউ ইয়র্ক টাইমস আরেকটা প্রবন্ধ ছাপলো ছবিসহ। সেই ছবিতে দেখা গেলো ম্যাথিউজ ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাথে একই ফ্রেমে রয়েছেন। কিউবান সরকারের প্রতিক্রিয়া হলো, এই ছবিটা বানানো ছবি।
এই ঘটনার পরপরই কিউবানরা জেনে গেলো যে ফিদেল ক্যাস্ট্রো জীবিত রয়েছেন এবং বাতিস্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও হাভানার লোকেরা দেশের এই একপ্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্রোহের আয়োজন নিয়ে তেমন একটা সিরিয়াস ছিলো না। বড় জোর মনকাডার মতো আরেকটা আত্মঘাতী মিশন হতে পারে, এর বেশি তারা ভাবেনি। তারা না ভাবলেও, অল্প ক’দিনের মধ্যেই ফিদেলের বিপ্লবী দল দুর্দান্তভাবে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো।
লা প্লাটা নদী পেরিয়ে গিয়ে সৈন্যদের কিছু ছোট ছাউনিতে আক্রমণ করে বসলেন ফিদেল তাঁর বাহিনী নিয়ে। এই ছাউনিতে থাকা সৈন্যদের অধিকাংশই নিহত হলো, কেউ বা বন্দি হলো। ছাউনিগুলোর সব অস্ত্রশস্ত্র দখলে চলে এলো ফিদেলের। এই জয় শুধুমাত্র ফিদেলের দলকে যে আত্মবিশ্বাস যোগালো তাই নয়, বরং তাঁর বাহিনীর অস্তিত্ব সম্পর্কে কিউবার লোকজন জানতে পারলো। এ প্রসঙ্গে চে গুয়েভারা লিখেছেন,
যুদ্ধে আমাদের প্রথম জয় হলো সিয়েরা মেস্ত্রো অরণ্যের লা প্লাটা নদীর মুখের কাছে ছোট ছোট কয়েকটি ছাউনি আক্রমণ থেকে। এতে বিদ্রোহী বাহিনীর অস্তিত্ব সম্পর্কে কিউবার জনগণ প্রথম জানতে পারলো। শুধু অস্তিত্ব নয়, যুদ্ধ করার ক্ষমতাও যে আমাদের রয়েছে – তাও জানা হলো ওদের। আমাদের নিজেদের পক্ষে এটা হলো নিজেদের উপর আস্থা ফিরিয়ে পাওয়া।
আস্থা ফিরে পেলেও, তখন পর্যন্ত দলের সদস্যদের মধ্যে আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট এবং সংহতি সেভাবে ছিলো না। ছোট ছোট কিছু গ্রুপ ফিদেলের দলে যোগ দিলেও, গেরিলা জীবনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকেই পালাতো। শেষমেশ ফিদেলের দলের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো মাত্র ১৮ জনে। এ দিয়ে টুকটাক সেনা ছাউনি হয়তো আক্রমণ করা যায়, বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটানো যায় না। লা প্লাটার যুদ্ধে প্রথম জয় হলেও, তখন পর্যন্ত স্থানীয় কৃষকরা ফিদেল বাহিনীর সাথে যোগ দিতে অনিচ্ছুক ছিলো। শহরে যারা বাতিস্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলো, তাদের কাছ থেকেও সাহায্যের কোনো আশা ছিলো না। কৃষকদের অনিচ্ছুক আচরণ সম্পর্কে চে বলেন,
সিয়েরা মেস্ত্রোর জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মধ্যে তখন প্রবলতম অনুভূতি ছিল আতংক। সংগ্রামের প্রথম দিকে স্থানীয় কৃষকরা আমাদের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তার কারণ তাঁদের ওপর সরকার এবং সরকারের তল্পি-বাহক জমিদার এবং ভূস্বামীদের যুগযুগ ধরে অকথ্য অত্যাচার। কৃষকরা স্বাধীনতার প্রত্যাশী যে স্বাধীনতা জমির ওপর তাদের অধিকার কায়েম করে তুলবে। কিন্তু বাতিস্তা বাহিনীর আগমন ভয়ংকর সন্ত্রাসের কারণ হয়ে উঠলো। আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল গুয়াজিবোদের ওপর অত্যাচার চালাতে লাগলো তারা। ফলে দলে দলে কৃষক প্রাণভয়ে ভীত হয়ে গৃহত্যাগ করতে লাগলো। আমাদের সংগে ওদের সম্পর্কও জটিল হয়ে উঠলো। আমাদের দেখতে পেলেই ওরা আতংকে ভীত হয়ে যেত, ভাবত আমাদের সূত্র ধরেই সরকারী বাহিনীর অচিরাৎ আবির্ভাব হবে এবং তাদের ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসবে। অপর পক্ষে আমরাও তাদের বিশ্বাস করতে পারতাম না, মনে হতো ওদেরই কেউ কেউ গুপ্তচরের কাজে লিপ্ত রয়েছে। পারস্পরিক নির্ভরতা ও বিশ্বাস বোধের অভাব দু’পক্ষকেই আতংকিত করে তুলেছিল।
এই অবস্থাটা হঠাৎ করেই পাল্টে যায় বাতিস্তা সরকারের এক ভুল সিদ্ধান্তে। গেরিলাদের আশ্রয় দেয় কৃষকরা, এই বিবেচনা থেকে কৃষকদের তুলে নিয়ে শহরাঞ্চলে বাসস্থান দেবার পরিকল্পনা নেয় সরকার। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কৃষকরা, বিশেষ করে তরুণরা। শহরে গিয়ে দাসত্বের জীবনকে মেনে নেওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করাটাকেই শ্রেয় মনে করলো তারা। সরকার এদিকে হাজার হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশুকে জোর করে তাদের বাসস্থান থেকে টেনে নিয়ে শহরে পুনর্বাসন করা শুরু করলো। পুনর্বাসিত কৃষকরা ভুগতে লাগলো ক্ষুধা, দারিদ্র, রোগ, মহামারী এবং মৃত্যুতে। শিশুরা মারা যেতে লাগলো খাদ্য আর চিকিৎসার অভাবে। শেষ পর্যন্ত বাতিস্তা সরকারকে এই পুনর্বাসন প্রকল্প বাতিল করতে হলো। কৃষকরা ফিরে এলো রুগ্ন, দরিদ্র এবং অসহায় অবস্থায়। এসে দেখলো তাদের ঘোর দোর সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চলছে বাতিস্তা বাহিনীর অত্যাচার। দেয়ালে পিঠ ঠেকা এই মানুষগুলো শপথ নিলো বাতিস্তার পতন পর্যন্ত সংগ্রাম চালাবে তারা।
অন্যান্য পর্বগুলো পড়ুন এখানে ⇑