সুমেরীয় সভ্যতার ব্যাপক অগ্রগতির কালে খ্রি. পূ. ২৫০০-খ্রি. পূ. ৩০০০ অব্দের দিকে আরবের মরু এলাকা থেকে আক্কাদ এলাকায় একদল সেমিটিকভাষী যাযাবর মানুষ এসে বসতি গড়ে। এরাই ছিল মেসোপটেমিয়া এলাকায় প্রাচীনতম সেমিটিক মানুষ। এরা কৃষিকাজে সাফল্য অর্জন করে এবং একসময় নগর সভ্যতা গড়ে তোলে। দিনে দিনে এই সভ্যতা বিশেষ প্রতিপত্তি বিস্তার করে। রাজা প্রথম সারগন বা শাররুকিন (খ্রি.পূ. ২৩৭০ – খ্রি.পূ. ২৩১৫)-এর আমলে আক্কাদিয়রা সুমের দখল করে নেয়। রাজা সারগন-এর খ্যাতি তখন আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে।
রাজা সারগন
সারগন সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় যে, কোনাে বৈধ পিতা না থাকায় কুমারী মা তার জন্মের পর তাকে ঝুড়িতে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেন। শেষে একজন দাসী তাকে কুড়িয়ে এনে লালন পালন করে। বড় হলে তিনি ‘কিশ’-এর। রাজা উরক জমমার অধীনে নিচু মানের চাকরিতে যােগ দেন। সৈনিক হিসেবে কাজ করে তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে তার আশ্রয়দাতাকে অপসারণ করেন ও লুগাস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এসময় সমাজের নিচু শ্রেণীর কিছু কিছু উপকার করেন। তিনি রাজা হয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি জোরদার ও প্রতিরক্ষার
উন্নতিতে অবদান রাখেন। বণিকদের উপনিবেশের নিরাপত্তা বিধানের জন্যে এশিয়া মাইনর এলাকায় তিনি সেনাদল পাঠান। লাগাশ, উর প্রভৃতি সুমেরীয় ও আক্কাদীয় শহরে তার প্রভুত্ব কায়েম হয়েছিল। মিশর ও সিন্ধু উপত্যকা ছাড়া তখনকার সভ্য দুনিয়ার সর্বত্র তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রাচীন এক শিলালিপির ভাষ্য থেকে জানা গেছে যে, ক্রিটদ্বীপ, গ্রিস উপকূল, পারস্য উপসাগরীয় এলাকা ও ইরান পর্যন্ত তাঁর আধিপত্য বিস্তৃত ছিল। সারগনের প্রচেষ্টায় গােটা পশ্চিম এশিয়ার সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল আক্কাদ। একটি শিলালিপির তথ্যে জানা গেছে যে, রাজা সারগনের রাজবাড়িতে প্রতিদিন ৫৪০০ লােক খাদ্যগ্রহণ করত। তিনি রাজত্ব করেছিলেন ৫৬ বছর।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজা সারগন গ্রাম এলাকার চাষিদের মধ্যে থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে একটি নিয়মিত সামরিক বাহিনী গঠনে সফল হয়েছিলেন। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন সুমের ও আক্কাদ এর রাজা নামে। সুমের বিজয়ের ফলে সেখানকার কিউনিফর্ম লিখন পদ্ধতি, বাণিজ্য কৌশল, পঞ্জিকা ব্যবহার ও নগর নির্মাণ পদ্ধতি গ্রহণ করে আক্কাদিয় সমৃদ্ধ হয়েছিল। সারগনের পর আক্কাদীয় এর সেরা রাজা ছিলেন নারামসিন।
তথ্যসূত্রঃ