২৫ ডিসেম্বর যীশুরজন্মদিন উপলক্ষে ক্রিসমাস উৎসব পালন করা হয়। কথা হচ্ছে, যীশুর জন্ম কি সত্যিই ২৫ ডিসেম্বর হয়েছিল? না আমরা অন্য কারো জন্মদিনকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করি? যীশুর জন্মদিন নিয়ে বাইবেলে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। যীশুর জন্ম ইতিহাস আমরা যতোটুকু জানি তা তাঁর অনুসারী সাধু-সন্তদের লেখা ইতিহাস থেকে। খ্রিস্টধর্মে এই ইতিহাসগুলোকে ‘গসপেল’ বলে। গসপেল অনুযায়ী, যীশুর মা মেরী ও তার হবু স্বামী জোসেফ আদমশুমারীতে অংশগ্রহণের জন্য নিজ শহর নাজারেহ থেকে বেথেলহেমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেথেলহেমেই যীশুর জন্ম হয়। এক ফেরেশতা যীশুর আগমনীবার্তা একদল মেষপালকের কাছে পৌঁছে দেন। মেষপালকেরা এই খুশির খবর সারা শহরে ছড়িয়ে দেয়।
এইখানেই গল্পের একটা বড় অসঙ্গতি। ডিসেম্বরের শীতে কোন মেষপালক মেষ চড়াতে মাঠে যায় না। গল্পকার কি তাহলে ভুল লিখেছেন? বা মিথ্যে কোন গল্প ফেঁদে বসেছেন? না, তা নয়।
ডিসেম্বরের এই উৎসবটা আসলে হাজার বছর ধরেই ইউরোপীয়দের ধমনীতে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরুহত ১২ দিনব্যাপী এক উৎসব। সেটা শেষহত জানুয়ারীর ১ তারিখে গিয়ে। নর্সরা (নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেনের লোকজন) এই উৎসবকে বলতো ‘আলো ও জীবনের উৎসব’। শীতের তীব্রতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জীবনকে উপভোগ করাইছিল এই উৎসবের মূল লক্ষ। আসন্ন শীতে সারভাইভ করার উদ্দেশ্যে প্রচুর পশু বলি দেয়া হত এই সময়। কাজেই, মাংস ও পানীয়র কোন অভাব থাকতো না কোথাও।
এদিকে জার্মানরা মনে করতো, দেবতা ওডিন বছরের এই সময় মর্ত্যে এসে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেন। সামনের বছর কার ভালো যাবে আর কার খারাপ যাবে সবই ওডিনের ইচ্ছা। ওডিনকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তারাও পশু বলি দিয়ে উৎসবে মেতে উঠতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওডিনের চেহারার সাথে আজকের সান্তাক্লজের চেহারারা ভয়াবহ মিল পাওয়া যায়। দেবতাপূজক এইমানুষগুলোপ্যাগাননামে পরিচিত ছিল।প্যাগান মানে মূর্তিপূজক।
কালক্রমে এই উৎসবগুলো রোমেও জনপ্রিয়তা পায়। রোমান আপার ক্লাস অবশ্য ভিন্ন নামে এই উৎসবগুলো চালু করে। ওরা ছিল দেবতা মিত্রার ভক্ত। মিত্রা হলেন সূর্য দেবতা। তার জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বর। ২৫শে ডিসেম্বরকে তাই বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন মনে করতো তারা। রোমানদের প্রবিত্র দিন আর আমাদের আজকের পবিত্র দিনের আইডিয়ায় কিন্তু বিস্তর তফাৎ। আমাদের কাছে পবিত্র দিন ঐ বিশেষ দিনে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে; এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবেনা এরকম হাজারো নিয়মকানুন।
রোমানদের পবিত্র দিন মানে ঐদিন কোন নিয়মনিষেধের বালাই নেই। যার যা খুশি তাই করবে। প্রভু দাস সাজবে, দাস সাজবে প্রভু। পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করে বিশাল শোভাযাত্রা হত। নানা রঙে, নানা ঢঙ্গে মানুষ সেই শোভাযাত্রায় অংশ নিত। এমনকি রাস্তায় নরনরারীর প্রকাশ্য যৌনাচারও ছিল সেই শোভাযাত্রার একটি অঙ্গ।
খ্রিস্টধর্ম একটা শক্ত অবস্থানে যাবার পর চার্চ চেষ্টা করলো এই অশ্লীল উৎসব বন্ধ করে দিতে। কিন্তু যে উৎসব মানুষের রক্তে মিশে গেছে, তাকে তো আর হুট করে বন্ধ করে দেয়া যায় না। চার্চের সব রকম চেষ্টাই ব্যর্থ হল। শেষমেশ চার্চ আমছালা দুটোই বাঁচানোর জন্য ২৫শে ডিসেম্বরকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা দিল। লোকে উৎসব করতে চায় করুক, কিন্তু সেই উৎসবের কেন্দ্রে যেন থাকে প্রভু যীশু। মিত্রা, ওডিন বা কোন প্যাগান দেবতা নয়।
শুরুর দিকের খ্রিস্টানরা কিন্তু যীশুর জন্মদিন নিয়ে অতোটা ভাবিত ছিল না। যীশুর পুনরুত্থানের মিথই ছিল তাদের ধর্মের সবচেয়ে বড় খুঁটি। চতুর্থ শতাব্দীর দিকে যীশুর জন্ম ইতিহাসের মিথটা সামনে চলে আসে। সেই সাথে তার সত্যিকার জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক আর ধোঁয়াশা। চার্চ তখন ২৫শে ডিসেম্বরকে অফিশিয়ালি যীশুর জন্মদিন ঘোষণা করে খ্রিস্ট ধর্ম আর প্যাগান সংস্কৃতির এক অদ্ভূত মিশেল তৈরি করে যা আজও টিকে আছে সদর্পে। খানিকটা ভিন্ন রূপে, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।
প্রশ্ন হচ্ছে, যীশুরসত্যিকার জন্মদিন তাহলে কবে? ধারণা করা হয়, সেটা সেপ্টেম্বর বা ফেব্রুয়ারীর দিকেহবে। মানে শরৎ বা বসন্তকালের কোন এক সময় যখন মেষপালকেরা তাদের মেষ চড়াতে বের হয়। ২৫শে ডিসেম্বর কোনভাবেই নয়।
এইখানে আবারো কনফিউশন। ২৫শে ডিসেম্বর না হয় দেবতা মিত্রার জন্মদিনকে যীশুর জন্মদিন বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ২৫শে ডিসেম্বরই কেন? ২১,২২ বা ২৩ ডিসেম্বর নয় কেন? হোয়াট ইজ সো স্পেশাল এ্যাবাউট ২৫শে ডিসেম্বর? এই প্রশ্নের উত্তরপেতে হলে আপনাকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে। এতোটুকু পর্যন্ত যেহেতু এসেছেন, ধরে নিচ্ছি আরো কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরতেও আপনার আপত্তি থাকার কথা না।
তো যা বলছিলাম, মধ্যযুগে এই উৎসব পরিচিত হয় ‘ক্রাইস্ট মাস’ নামে। যীশুর স্মরণে যে জনসমাগম হয়। অবশ্য লোকের আচার-আচরণ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে এটা যীশুর স্মরনে না অন্য কিছু। সেসময়কার ক্রিসমাস র্যালী দেখলে হঠাৎ কারো মনে হবে এটা হ্যালোউইন উৎসব না তো? কিংবা ব্রাজিলের কোন কার্নিভাল? সতের শতাব্দীর শুরুতে ইংল্যান্ডে ধর্মীয় সংস্কার শুরু হয়। পিউরিটান বা শুদ্ধতাবাদীরা ক্রিসমাসকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ক্রিসমাস চলে যায় আন্ডারগ্রাউন্ডে। এই নিষেধাজ্ঞাও বেশিদিন টেকেনি। জনগন ঠিকই একে ফিরিয়ে আনে কিছুদিনের মধ্যে। কিছু ইংলিশ ততোদিনে তাদের নতুন উপনিবেশ আমেরিকায় বসতি করা শুরু করেছে। তাদের কেউ কেউ ক্রিসমাস থেকে একশো হাত দূরত্ব বজায় রাখছে, কেউ কেউ আবার ছোটখাটো ফ্যামিলি পার্টির মধ্য দিয়ে একে সেলিব্রেট করছে।
১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমেরিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের জোয়ার শুরু হয়। সেই জোয়ারে আর সব ব্রিটিশ কালচারের সাথে ভেসে যায় ক্রিসমাস উদযাপনের রেওয়াজও (খেয়াল করে দেখবেন, আমেরিকানরা চা খায় না, খায় কফি। এটাও এই স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয়তাবাদী জোয়ারের ফসল)। ক্রিসমাসকে তো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কালচারের তকমা দিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হল, কিন্তু এর কোন বিকল্পও তৈরি হল না। বাধ্য হয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই আমেরিকানরা পুরোদমে ক্রিসমাস সেলিব্রেট করা শুরু করে। এই সেলিব্রেশনের অংশ হিসেবে নতুন কিছু অনুষঙ্গও ঢুকে পড়ে এই উৎসবে। ক্রিসমাস ট্রি হচ্ছে এমনই এক অনুষঙ্গ।
১৮৪৮ সালে লন্ডনেরএকটি প্রভাবশালী দৈনিকে একটি ছবি ছাপা হয়। ছবিটির বিশেষত্ব হচ্ছে ইতিহাসে এটিই প্রথম ক্রিসমাস ট্রি’র আত্মপ্রকাশ। ছবিতে দেখা যায় এক রাজকুমার ও এক রাজকুমারী ক্রিসমাস ট্রি-র পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ছবির পেছনের ইতিহাসটা অনেকটা এরকম।
১৮৪০ সালে ব্রিটেনের রাজকুমারী ভিক্টোরিয়ার বিয়ে হয় তার কাজিন জার্মান রাজকুমার আলবার্টের সাথে। আলবার্ট বিয়ের উপহার হিসেবে আরো অনেক কিছুর সাথে নিয়ে আসেন ক্রিসমাস ট্রি। ইংরেজরা সেই প্রথম ক্রিসমাস ট্রি’র সাথে পরিচিত হল। রাজপরিবারের এই ফ্যাশান অভিজাত মহল পেরিয়ে দ্রুতই চলে গেল সাধারন মানুষের দুয়ারে। দ্রুতই এই ক্রিসমাস ট্রি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। বছর দুয়েকের মধ্যেই ইংরেজদের ঘরে ঘরে ক্রিসমাস উৎসবের অপরিহার্য অংশ হিসেবে শোভা পেতে লাগলো এই ক্রিসমাস ট্রি।
ক্রিসমাস ট্রি কিন্তু জার্মান সভ্যতার অনুষঙ্গ হিসেবে অনেক আগে থেকেই ছিল। জার্মানদের শীতকালীন ‘আলো ও জীবনের’ উৎসবের একটি অপরিহার্য অংশ ছিল এভারগ্রীন নামের একটি গাছকে আলো দিয়ে সাজানো। এই এভারগ্রীন ট্রি-ই জার্মান যুবরাজের হাত ধরে ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে ক্রিসমাস ট্রি রূপে। অতি অল্প সময়েই তা চলে যায় আটলাণ্টিকের ওপারেও। কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপারটা এমন হয়ে গেলো যে, এই ট্রি যে ক্রিসমাস উৎসবের নতুন সংযোজন এই ব্যাপারটাই মানুষ ভুলে গেল। মানুষের মনে হতে লাগলো অনন্তকাল ধরেই বুঝি এই ট্রি ক্রিসমাস উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
এই ব্যাপারটা কিন্তু প্রতিটা উৎসবের ক্ষেত্রেই ঘটে। অন্য সভ্যতার উপকরণ এসে আপনার আনন্দ উৎসবে শামিল হয়। একসময় আপনি বুঝতেও পারেন না কোনটা আপনার সংস্কৃতি আর কোনটা ভিনদেশী সংস্কৃতি। আমাদের পয়লা বৈশাখের মঙ্গলযাত্রার কথাই ধরা যাক না! নব্বইয়ের আগে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার কোন অস্তিত্বই ছিল না। নব্বইর পর হাঁটি হাঁটি পা পা করে যাত্রা শুরু করে এই শোভাযাত্রা। কালক্রমে এতে বাঙালি হুতোম প্যাঁচার সাথে যুক্ত হয় চাইনিজ ড্রাগন। অনেকে বলেন, আমাদের উৎসবে চাইনিজ ড্রাগনের তাৎপর্য কী? আমি বলবো- উৎসবের এটাই নিয়ম, এটাই সংবিধান। এটাকে ঠিক ‘অন্য দেশের সংস্কৃতি এসে আমার সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নিল’ বলে না। এটাকেই বলে ‘দেবো আর নিবো, মিলাবে মিলিবো’। ব্রিটিশরা যেমন জার্মানদের ক্রিসমাস ট্রি নিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেনি, বরং উৎসবের আমাজে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ক্রিসমাস ট্রি তো জার্মানদের কাছ থেকে এলো, কিন্তু সান্তাক্লজ এলো কোথা থেকে? সান্তা কি যুগ যুগ ধরেই ক্রিসমাসের অংশ না এটাও তুলনামূলক নতুন সংযোজন? এই গল্পের উত্তর পেতে হলে আমাদের যেতে হবে হল্যাণ্ডে।
মধ্যযুগে সেন্ট নিকোলাস নামে একজন সাধু ছিলেন। তিনি ছিলেন গোপনে উপহার দেবার জন্য বিখ্যাত। ধরা যাক, আপনি এক জোড়া জুতো বাইরে ফেলে গেছেন। ফিরে এসে দেখলেন তাতে কিছু কয়েন রাখা আছে। কে রেখেছে এই কয়েন? কে আবার! সেন্ট নিকোলাস।
তার স্মরণে প্রতি বছর ৬ই ডিসেম্বর হল্যাণ্ডে সেন্ট নিকোলাস ডে পালিত হত। এইদিন শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট বাচ্চাদের তাদের ভালমানুষির প্রতিদান হিসেবে একগাদা উপহার দেয়া হত। বাচ্চাদের বলা হত, সেন্ট নিকোলাস তাদের উপর খুশি হয়ে স্বর্গ থেকে এই গিফট পাঠিয়েছেন। আর দুষ্টু বাচ্চারা খালি হাতে ভ্যা ভ্যাঁ করে ঘুরে বেড়াতো। ডাচরা যখন আমেরিকায় এলো তখন তারা আর সব কিছুর সাথে এই সেন্ট নিকোলাস ডে-ও নিয়ে এলো।
ডাচদের এই আইডিয়া ধার করে ক্লেমেন্ত ক্লার্ক মুর নামে এক লোক ১৮২৩ সালে লেখেন ‘A visit from Saint Nikolas’ নামের এক কালজয়ী কবিতা। মজার ব্যাপার হপচ্ছে, এই লোক আবার নিউইয়র্কের মন্ত্রী ছিলেন সেইসময়। এরশাদ টাইপ ব্যাপার-সেপার আর কি! এই কবিতায় এমন এক ভালোমানুষ বুড়োর কথা বলা হয়েছে যিনি স্লেজ গাড়িতে করে বাচ্চাদের জন্য ব্যাগভর্তি খেলনা নিয়ে আসেন। কবিতাটি বাচ্চাদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় হয়। ঘরে ঘরে বাচ্চারা স্লেজ গাড়িতে করে আসা মানুষটির জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করে। তবে এই কবিতা লিখে কবি সাহেব নিজেই যথেষ্ট শরমিন্দা ছিলেন। মন্ত্রী হয়ে বাচ্চাদের জন্য ছড়া লিখেছেন ব্যাপারটা ঠিক আসে না!
সে যাই হোক, সান্তাক্লজের নাম তখনো সান্তা ক্লজ হয়নি। তার চেহারাও ঠিক আজকের রূপ পায়নি। এক এক শিল্পী তাকে একেকভাবে কল্পনা করে নিতেন। কেউ জার্মান দেবতা ওডিনের মত, কেউ খানিকটা গম্ভীর, কেউ মাতাল, কেউ বা গোপাল ভাঁড়। ১৮৬৩ সালে থমাস ন্যাস্ট নামে এক আমেরিকান কার্টুনিস্ট সান্তার আজকের হাসিখুশি রূপদান করেন। ধারণা করা হয়, সান্তা ক্লজ উত্তর মেরুতে ‘Santa Claussville’ নামে একটা জায়গায় থাকেন। ওখান থেকেই প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় বাচ্চাদের জন্য এত্তোগুলা খেলনা-দেলনা নিয়ে আসেন উনি। এইসব ধারণাও ন্যাস্টের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা।
ও – বলতে ভুলে গেছি। ডাচ ‘নিকোলাস ডে’ আমেরিকাতে এসে তার তারিখও বদলে ফেলে। বলা বাহুল্য, ৬ তারিখ থেকে সেটা যায় ২৫ তারিখে। এইবার আসি, এই ২৫তারিখের তাৎপর্যে।
জেনে অবাক হবেন কিনা জানি না, এক যীশুই যে কেবল কুমারী মায়ের গর্ভে জন্মেছেন তা কিন্তু নয়। নানান দেশের পুরান ঘাঁটলে অন্তত জনা পঞ্চাশেক মানুষ/দেবতার সন্ধান পাওয়া যাবে যার কিনা কুমারীমায়ের গর্ভে জন্মেছেন। এদের একটা বড় অংশের জন্ম আবার ২৫শে ডিসেম্বর। আরো মজার ব্যাপার, এদের প্রায় সবারই তিন দিনের মাথায় পুনরুত্থান ঘটেছে। কাকতালীয়?
গ্রীক দেবতা ডায়োনাইসিস জন্ম কুমারী মায়ের গর্ভে, জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বর। মৃত্যুর পর তারও পুনরুত্থান ঘটে।
৩০০০ বছর আগে মিশরে হোরাস নামে এক দেবতার জন্ম হয়। বলুন তো তার জন্মদিন কবে? ঠিক ধরেছেন, ২৫শেডিসেম্বর। কার গর্ভে? আইসিস মেরী নামের এক কুমারী মায়ের গর্ভে। যীশুর মত তারও ১২ জন শিষ্য ছিল। তিনিও এক শিষ্যের বিশ্বাসঘাতকতায় ক্রুশবিদ্ধ হন। ৩ দিন পর তার পুনরুত্থান ঘটে।
হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ জন্ম কুমারী মায়ের গর্ভে। জন্মতারিখ জানা যায় না। তবে ভারতীয়রা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি জানলে তার জন্মদিনও ২৫ ডিসেম্বরই হত বলে অনুমান। এই বেচারাও পুনরুত্থানের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
মিত্রার কথা তো আগেই বলেছি উপরে।
বোঝা গেল, প্রাচীনযুগে কুমারী মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়াটা মোটামুটি একটা স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কুমারী মা না হলে মান-সোলেমান থাকতেসে না এইরকম অবস্থা। পুনরুত্থানের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। পুনরুত্থান না হলে আপনি কিসের মহাপুরুষ? আর মহাপুরুষ হবার তিননম্বর শর্ত হচ্ছে, আপনাকে জন্ম নিতে হবে ২৫শে ডিসেম্বর। তারে আগেও না, পরেও না। কিন্তু কেন?
আমরা সবাই জানি, উত্তর গোলার্ধে ২১ ডিসেম্বর হচ্ছে সবচেয়ে বড় রাত। এইদিন সূর্য দিগন্তের একেবারে নিম্নতম বিন্দুতে অবস্থান করে। ২২, ২৩, ২৪ সূর্যের এই অবস্থানের কোনরূপ পরিবর্তনহয় না। ২৫ তারিখ থেকে সূর্য আবার একটু একটু করে উপরে উঠতে শুরু করে। ফলাফল দিন আবার বড় হতে শুরু করে আর রাত ছোট। ২৫ ডিসেম্বর তাই নতুন কিছুর সূচনা নির্দেশ করে। নতুন আলোর জন্ম, জন্ম নতুন আশা ও সম্ভাবনার। যুগে যুগে তাই মহাপুরুষেরা এই ২৫ তারিখকেই বেছে নিয়েছেন জন্মাবার জন্য। আর ভুল করে কোন মহাপুরুষ একটু এদিক ওদিক করেছেন তো তার রেহাই নেই। ভক্ত-অনুসারীদের উৎসাহে তার জন্মদিনও বদলে ২৫ তারিখ করা হয়েছে। যীশু যার সর্বশেষ উদাহরণ।
ফুটনোটঃ Why were so many ancient gods born on December 25th, the winter solstice?