এক
শাজাহান বাদশা আর মমতাজ মহলের দ্বিতীয় পুত্র শাহ সুজা ছিলেন একটি অপদার্থ, জীবনে তিনি তেমন কিছুই করে যেতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে যে পন্থায় তার ও তার পরিবারের বাত্তি নিভিয়ে দেয়া হয় তা এমনকি শয়তানের পয়গম্বর আওরঙ্গজেবেরও পাওনা ছিলনা। জেনারেল মীর জুমলার ধাওয়া খেয়ে পলাতক রাজপুত্র সুজা পরিবারসহ গিয়ে ওঠেন আরাকান রাজার আশ্রয়ে। কথা ছিল রাজা মক্কাগামী জাহাজের ব্যবস্থা করে দেবেন, বদলে সুজা দিবেন মণি মাণিক্য। কেউ কথা রাখেনি।
শাহ সুজা লোকটির বুদ্ধি বা সাহস ছিলনা একথা বলা অতি অন্যায্য ব্যাপার। সৈনিক হিসেবে তিনি উঁচুপদেরই ছিলেন, তরুণ বয়সে অনেক যুদ্ধে বীরত্বের সাথে তার জয় হয়। তার বুদ্ধিসুদ্ধিও মন্দ ছিলনা, বড়ভাই দারার মতই তিনি শিল্পসাহিত্য ইত্যাদির কদর করতেন, বিশেষতঃ পারস্যের শিল্পসাহিত্য।
শিয়াদের বিরাট ফ্যান ছিলেন কিনা। আওরঙ্গজেব ছড়িয়েছিলেন যে সুজা শিয়া হয়ে গেছে ইত্যাদি, কিন্তু সে অভিযোগ সম্ভবতঃ সঠিক নয়। সুজা শিয়াদের অত্যন্ত ভাল পেতেন, তার দুইটি বউই শিয়া ছিল, পারস্য ছিল তার মুগ্ধতার উৎস।
ভারতবর্ষের গদীতে উঠার জন্য পারস্যের সাহায্যও তিনি কামনা করেছিলেন নিশ্চয়। কিন্তু তিনি অফিশিয়ালি শিয়া ছিলেন কিনা তা নিয়ে তর্কের অবকাশ আছে। সে যাই হোক, বীরত্ব শিল্পানুরাগ ইত্যাদি ভাল ভাল গুণ মাঠে মারা গিয়েছিল তার সুরা আর সুন্দরীর প্রতি অন্ধ আকর্ষনের জন্য।
খুব জরুরী রাজকার্যের মাঝখানে তিনি হঠাৎ সব থামিয়ে হেরেমে নৃত্যগীতের আসর বসাতেন, মন্ত্রী মিনিস্টার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাত। সময় যেত সাধন হতনা।
শাহ সুজা যখন বাংলার সুবাদার ছিলেন তখন দেশ ভালই ছিল। উত্তর বর্ডারে কুচবিহার রাজ্য সহ কিছু কিছু এলাকায় হালকা ঝামেলা ছাড়া মোটের উপর কোন বড় যুদ্ধবিগ্রহ চলেনি, এলাকার জমিদারেরা স্বয়ং বাদশার ছেলেকে শাসক হিসেবে পেয়ে অভিভূতই ছিল। রাজমহলে স্থানান্তরের আগে তার রাজধানী ছিল ঢাকায়, চকবাজারের বড় কাটরা সুজা থাকবার জন্যেই তৈরি হয়। পরে অবশ্য তিনি সেখানে থাকেননি, রাজধানী স্থানান্তর হয় রাজমহল।
তখন বড় কাটরা বিবিধ ধনী সওদাগরের আবাসিক হোটেলে পরিণত হয়। কাটরা শব্দটি সম্ভবত আরবি, এর অর্থ খিলানওলা বাড়ি। ফার্সি সাহিত্যে কাটরা কথাটি সরাইখানা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ঢাকায় সুজার আরেক কীর্তি শিয়া মাজার হুসেনী দালান। কারবালার যুদ্ধে নিহত শিয়াদের মহান ইমাম হুসেনের স্মরণে এই নামকরণ।
১৬৫৭ সালে শরতের মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসে জোর গুজব যে শাজাহান বাদশা খরচ হয়ে গিয়েছেন। বড়ভাই দারা কিন্তু এই গুজব অস্বীকার করেন, কিন্তু লোকের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয় যে তিনি আসলে গুটি পাকাচ্ছেন। নানান ঢাকবাদ্য পিটিয়ে শাহ সুজা বাংলা ছেড়ে দিল্লীর রাস্তা ধরলেন গদীলাভের উদ্দেশ্যে, সেজভাই আওরঙ্গজেবেরও সেদিকেই নজর ছিল।
অনেক অনেক যুদ্ধের পরে বিজয়ী হিসেবে খাড়া হন আওরঙ্গজেব। দারাকে ধরে দিল্লীর রাস্তায় প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়, আর সুজাকে ধাওয়া করেন আওরঙ্গজেবের এক নম্বর জেনারেল মীর জুমলা। পূবদিক ফিরে সুজা দেন দৌড়। ঢাকা হয়ে চিটাগং এর পথ ধরেন তিনি ও তার পরিবার।
এইখানে আমাদের গল্পের শুরু। আসুন পড়ি সুজার ফেরারী দিনের কাহিনী। যদুনাথ সরকারের “হিস্ট্রি অফ আওরঙ্গজেব“ অবলম্বনে।
দুই
১২ এপ্রিল শাহ সুজা ঢাকায় পৌঁছান। বিত্ত আর নামডাক হারিয়ে তিনি তখন নিঃস্ব। পরিচিত জমিদারের দল হাওয়া বুঝে তার বিপক্ষে চলে গেল, তাদের মোকাবিলা করার কোন শক্তিই তার ছিলনা। ধাওয়া করে আসছে মীর জুমলা। আরাকানের দস্যু রাজাকে খবর পাঠানো হয়েছিল, তখনো কোন উত্তর আসেনি। অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন সুজা, ৬ মে পরিচিত শহর ছেড়ে অল্পকিছু অনুসারী আর পরিবার চাকরনফর নিয়ে ঢাকা থেকে ৮ মাইল দূরে ধাপায় রাত কাটালেন।
পরদিন গেলেন শ্রীপুর। প্রতিদিনই তাকে ছেড়ে যাচ্ছিল একের পর এক সিপাই আর নৌকাওলা, এমনকি কিছু অত্যন্ত অনুগত লোকেও লম্বা দেয়। ৮ তারিখ শ্রীপুর ছেড়ে যাবার কিছু পরেই আরাকানের রাজার পক্ষে ৫১ মগ আর ফিরিঙ্গি জাইলা নৌকা পাঠান চাটগাঁ এর গভর্নর।
পরদিন যাত্রা শুরু হয় লক্ষীপুর পরগণা থেকে, ভালুয়া দূর্গের মাইল আটেক আগে যাত্রাবিরতি হয়। দূর্গের প্রধানকে ডাকেন সুজা, তারপরে ফট করে বন্দী করেন। দূর্গের ভিতর লোক পাঠানো হয় চিঠি লিখে যেন তারা সুজার কাছে দূর্গ সমর্পণ করে। তারা উলটে দূতকে বন্দী করে ফেলল।
অন্যান্য বিশেষ কিছু লেখা-
১১ মে চাটগাঁয়ের এক মগ জেনারেল এসে হাজির হয় আরো তিনটে সামরিক জাহাজ নিয়ে। ফতুর সুজার দূর্গ আক্রমণের পরিকল্পনা শুনে মহা বিরক্ত হয় সে, আর খোলাখুলিভাবেই বলে শোন হে রাজপুত্তুর, আমাদের রাজা বলে পাঠিয়েছেন যেন আমরা তোমাকে সাহায্য করি যদি তুমি কোন দূর্গ দখলের ক্ষমতা রাখ। তুমি তো দেখি ভালুয়া দূর্গই আমাদের সাহায্য ছাড়া নিতে পারছোনা দেখি। আজাইরা বয়তল কোথাকার। ওইসব বাদ দিয়ে চটপট জাহাজে উঠ, তোমাকে আরাকান পৌঁছে দেই। যত্তসব ঝামেলা।
ভগ্নমনোরথ শাহ সুজা চুপচাপ জাহাজে উঠলেন।
পরিবার পরিজন চাকরনফরের মধ্যে শুরু হল ব্যাপক ফিসফিস। পূববাংলার নদী বেয়ে চাটগাঁও এর দস্যুকাহিনী কে না জানে। আস্তা নোয়াখালি বাখরগঞ্জ জিলাই লোকশূণ্য হয়ে পড়েছিল এদের যন্ত্রনায়। এদের দুঃসাহসিক আক্রমণ, ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা, ছোটলোকের মতন বেশভুষা, জংলী আচরন, জাতপাতধর্মহীনতা আর নোংরা অপরিষ্কার পশু জবাই করে খাওয়ার গল্প ইত্যাদি সারা বাংলার হিন্দু মুসলমানের আতংকের বস্তু ছিল।
তাহলে কি সুজা ভুল করছেন? তার কিইবা করার ছিল, যত নিষ্ঠুরই হোক আওরঙ্গজেবের তুলনায় তো কিছুই না। পিতা ও অন্য দুই ভ্রাতার করুণ পরিণতির কথা ভেবে সুজা আত্মসমর্পনের আইডিয়া বাদ দেন। দয়ার সাগর পিতা শাজাহান বুড়ো বয়সে নিজেরই প্রাসাদে বন্দী। উদার ও মার্জিত দারাকে শিকলবন্দী করে দিল্লীর রাস্তায় চক্কর দেয়া হয়, আর ফালতু বিচারের প্রহসনের পর দাসেরা তাকে হত্যা করে। মহান সাহসী মুরাদ বখশ তার দরবেশ ভাই আওরঙ্গজেবের বন্দী। সুদর্শন সুলেমান পর্বত আর তুষারের রাজ্যে ফেরারী।
না, এই পরিণতির চেয়ে শ্রেয় দূর দেশে জংলীদের হাতে মরণ। খুদা হাফেজ হিন্দুস্তান, সকল ধন দৌলত ঐশ্বর্যের দেশ তুমি আওরঙ্গজেবেরই হলে তাহলে।
বিশ বছর যে দেশ শাসন করেছেন আর তেতাল্লিশ বছর যেখানে কাটিয়েছেন, সেই বাংলা ছেড়ে সুজা আরাকান রওনা দেন ১২ মে ১৬৬০ সালে। সাথে পরিবার আর জনা চল্লিশেক অনুসারী। তার পরের কাহিনী রহস্যে ঘেরা। আমল-ই-সালিহের লিখক ১৬৭১ সালে লিখে যান, “আরাকানে সুজার যে কি হল কিছুই জানা যায় না। সে যে কোন দেশে কোন খানে আছে, বেঁচে আছে না মারা গেছে খুদাই মালুম।” ষাট বছর পর, কাফি খাঁ সায়েবও কিছু জানতে পারেননি।
তিনি বলেন, “আরাকানে সুজার কোন নামগন্ধ নাই। সে যেন স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে, (ভারতে) কেউই তার সন্ধান পায়নি।” নানান কান ঘুরে আওরঙ্গজেবের কানেও এরকম গুজব আসতে থাকে। কেউ বলে সুজাকে পারস্যে দেখা গেছে, আবার শোনা যায় ভারতের কোন কোণায় সুজার ছেলে বুলন্দ আখতারকে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
এইসব পাতলা খবরে বিরক্ত আওরঙ্গজেব বাংলার নয়া সুবাদার মীর জুমলাকে আসাম দখলের পর আরাকান যাত্রার নির্দেশ দেন, হুকুম হয় সুজা ও তার পরিবারকে পাকড়ে নিয়ে আসার। মীর জুমলার উত্তরাধিকারী শায়েস্তা খাঁ যখন ১৬৬৬ সালে চাটগাঁও মগদের থেকে উদ্ধার করেন তখনও সুজার খবর নাই। আরাকানে তখন ইয়োরোপীয় ব্যবসাদারদের অবাধ আনাগোনা, সুতরাং তারাই একমাত্র কিছু খবর জানতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
এরকম একটি সূত্রে আমরা জানতে পাই, “আরাকানের অনেক মোগল পাঠান অধিবাসী সুজার প্রতি আনুগত্য দেখায়, আর তাদের সাথে নিয়ে রাজার বিরুদ্ধে ক্যু করার ফন্দী আঁটেন সুজা। এরপরে তার প্ল্যান ছিল আবার বাংলা অধিকার।” আরাকানের রাজা এই খবর জেনে যান, আর “সুজাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। অল্প কিছু অনুসারী নিয়ে সুজা জঙ্গলে পালান, পেছনে ধাওয়া করে মগের দল। তারা কুপিয়ে ফালাফালা করে তাকে হত্যা করে।”
এই তথ্যের উৎস ওলন্দাজ বণিক ইয়ান টাক। ওলন্দাজ দপ্তরী নথিতে উল্লেখ আছে যে, ৭ ফেব্রুয়ারী ১৬৬১ সালে যখন আরাকানিরা সুজার বাড়ি ঘেরাও করে আর আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন সুজা পরিবার নিয়ে ত্রিপুরার দিকে পালান। কিন্তু সম্ভবতঃ শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে, যদিও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায়না তবে তিনি নিহত হয়েছিলেন ঠিকই। জঙ্গলে পালানোর গুজব সম্ভবতঃ ছড়ায় তার অনুসারীর দল।
তিন
এই হল যদুনাথ সরকারের জবানে সুজার কাহিনী। তিনি যেরকমটি বলেছিলেন, পুরো ব্যাপারটিই ধোঁয়াশায় ঘেরা। কি যে হল ঠিক করে বুঝা মুস্কিল।
আরেকটি বইয়ে উঁকি মারি আসেন। বইয়ের নাম বার্মা – পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট, লিখক অ্যালবার্ট ফিচ। তিনি বলছেনঃ
“…আওরঙ্গজেবের সাথে পরাজয়ের পর তিনি পিছিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সাগরের কাছেই ঢাকা বলা চলে, কিন্তু সুজার জাহাজ ছিলনা। কোথায় যে যাবেন দিশা না পেয়ে তিনি পত্র লিখেন আরাকান রাজার প্রতি যেন তাকে একটি জাহাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ঐতে চেপে তিনি মক্কা যাওয়ার ধান্দা করছিলেন। নানান পর্তুগীজ আধা ফিরিঙ্গীভর্তি জাহাজ গেল সুজাকে উদ্ধারের জন্য। আরাকানের রাজা তাকে আদর করেই বরণ করলেন, আর মোগল রাজপুত্রের প্রয়োজনীয় মালসামানের আয়োজন করা হল।
সমস্যা হল, জাহাজের আর খবর নাই। দিন যায়। অস্থির হয়ে পড়েন শাহ সুজা। তার হাতে তখনও ধনজহরত যথেষ্ঠ, জাহাজের দাম তিনি মিটিয়ে দিতে সক্ষম। আবার ঐ জহরতের দিকেই ছিল আরাকান রাজার নজর।
বলা হয়ে থাকে রাজামশাই আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঘুষ পেয়েছিলেন যেন সুজাকে হস্তান্তর করা হয়। সেজন্যই নাকি তিনি দেরি করছিলেন। সুজা লোক পাঠাল জাহাজের খোঁজে, রাজা উলটে সুজাকে তলব করলেন। প্রাসাদে যেতে সুজার সমস্যা ছিল, তার ধারণা ছিল রাজা তাকে পত্রপাঠ গারদে ঢুকাবে। সুজা তার বড় ছেলেকে পাঠালেন। ছেলে বলল সুজা অত্যাধিক অসুস্থ, তাই আসতে পারলেননা। এই তার নজরানা।
আরাকানরাজ আরও অস্থির হয়ে পড়ল, কয়দিন পরে সে খবর পাঠাল সুজার একটি মেয়ের সাথে তার শাদীর খায়েস। সুজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, পাগলে বলে কি। তৈমুরের রাজবংশের মেয়ের সাথে বিয়ে আরাকানের মগ রাজার? আস্ত বংশ তো রসাতলে গেল। না করে দেওয়া হল। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আরাকানরাজ।
এইবার ফিকির খুঁজা শুরু করে সুজা। বিদ্রোহ করতে হবে। আরাকানের মুসলমানদের একত্র করার চেষ্টা করলেন তিনি, সাথে ছিল বাংলা থেকে আনা অনুসারীর দল। ঐ নিয়ে প্ল্যান হল তলোয়ার নিয়ে রাজার কল্লা ঘ্যাচাং করা হবে। অসম্ভব উন্নাসিক প্ল্যান, কিন্তু ব্যাপার হল এরকম প্ল্যান করে আগেও সফল হয়েছে কিছু খুচরা পর্তুগীজ হার্মাদ।
দুঃখের বিষয় প্ল্যানের আগের দিন সব ফাঁস হয়ে যায়। পালানোর চেষ্টা করেন সুজা, কিন্তু ঘন জঙ্গলে বেশিদূর তিনি যেতে পারেননি। বলা হয়ে থাকে তাকে ঐখানেই হত্যা করা হয়। সুজার কোন খবর আর কখন জানা যায়নি। তার পরিবারকে পাকড়ে ফিরত আনা হয়, সোজা গারদে পোরা হয় তাদের। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বড় মেয়েকে শাদী করে খায়েস পূরন করেন রাজা, শোনা যায় রাজমাতারও সুজার বড় ছেলের দিকে নজর ছিল।
সুজার ছেলের তাতে নিশ্চিতই আপত্তি ছিল, বরং সেও বাপের মত বিদ্রোহ ঘটানোর পাঁয়তারা শুরু করে। এই খবরও ফাঁস হয়ে যায়। রাজা অসম্ভব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, আস্ত পরিবার খতম করার হুকুম জারি হয়। এমনকি সদ্যবিবাহিত বউটিকেও, যে কিনা গর্ভবতী ছিল তখন। সুজার ছেলেদের কল্লা ভোঁতা কুড়াল দিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়, অন্ধকার খুপরিতে আটকে না খাইয়ে মারা হয় সুজার মেয়েদের।”
এই হল ফিচসায়েবের বর্ণনা। তিনিও শোনা কথা বলছেন, তার গল্পের উৎস বার্নিয়ের এর লিখা বই। ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ের ছিলেন ফরাসী চিকিৎসক ও পর্যটক, ঘুরতে ঘুরতে ভারতে আসার পর তিনি আওরঙ্গজেবের ডাক্তার হিসেবে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন। বার্নিয়েরের গল্প আরেকদিন। হতভাগ্য সুজার গল্প আজ এখানেই শেষ।
বাদশাহ আওরঙ্গজেবের সিংহাসন দখল ও ভণ্ডামী নিয়ে পড়ুনঃ বাদশাহ আওরঙ্গজেব: অন্ধকার অধ্যায়